ভান করতে থাকো


Behavioral psychology তে একটা কনসেপ্ট আছে যে, আমাদের শারীরিক আর মানসিক অবস্থা খুব strongly connected. একটা আরেকটা কে affect করে। এটার একটা সাইড খুব সহজেই বোঝা যায়। যেমন কেউ যদি খুশি হয়, তার চেহারায় সেটার প্রতিফলন ঘটে. মুখ হাসি হাসি হয়ে যায়। গলার স্বরেও পরিবর্তন আসে। শরীরে এনার্জি ফীল  করা যায়। আবার মন খারাপ থাকলে, মুখটা গোমড়া থাকে, শরীর দুর্বল লাগে। মেজাজ গরম হলেও তার প্রভাব শরীরে পড়ে। এটা আমরা খুব সহজেই বুঝি। 

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, উল্টো দিক থেকেও ব্যাপারটা ঘটে। Body language পরিবর্তন করলে সেটা মনের উপর প্রভাব ফেলে। খুব ইন্টারেষ্টিং কিছু এক্সপেরিমেন্ট এর মাধ্যমে দেখা গেছে এই effect . বিখ্যাত behavioral psychologist Amy Cuddy তার গবেষণায় এরকম কিছু এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, একজন মানুষ যদি মাত্র ২ মিনিট কোনো না কোনো 'Power Pose' অর্থাৎ খুব পাওয়ারফুল বা আত্মবিশ্বাসী মানুষের মতো body language নিজের মধ্যে নিয়ে আসে, তাহলে সে আসলেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে , এবং অন্যরাও তাকে সেরকমই মনে করে! 

একইভাবে আরেক পরীক্ষায় দেখা গেছে, খুব নোংরা কোনো কাজ যখন একদল লোককে করতে দেয়া হলো, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই খুব বিরক্তি প্রকাশ করলো কাজটার শেষে। অথচ আরেক গ্রূপকে ওই একই কাজ করতে দেয়া হলো, তবে তারা কাজটা করলো মুখে আড়াআড়ি ভাবে কলম চেপে ধরে। এভাবে মুখে কলম ধরে থাকলে, মুখটা হাসি হাসি হয়ে থাকে। এই গ্রূপটা অন্য গ্রূপের চেয়ে অনেক বেশি খুশি মনে কাজটা করলো এবং কাজ শেষে তেমন বিরক্ত মনে হলো না, বরং তারা মজা পেয়েছে বললো। অর্থাৎ দেখা গেলো, যদিও তারা হাসছিলো না, তবুও কেবল হাসি হাসি মুখের কারণে সেটা আসলেই তাদের মনে খুশি তৈরী করেছে, তাই একটা অপছন্দনীয় কাজও তাদের কাছে তেমন খারাপ লাগে নি। 

অর্থাৎ ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো, মানুষ যদি কেবল কোনো একটা emotion বা mental condition এর body language কেবল নকল করে, তাহলে ওই condition আসলেই তার ভেতরে তৈরী হয়! তাই psychologist-রা বলছে, এটাকে নিজের advantage এ কাজে লাগাও। অর্থাৎ, কনফিডেন্স এর ভান করো, আসলেই কনফিডেন্স পাবে। নিজেকে একজন potential candidate হিসেবে দেখো, সেরকম act করো, আসলেই সেরকম যোগ্য ব্যক্তির মতো মানসিকতা তৈরী হবে। ইংরেজিতে প্রচলিত কথা আছে, fake it till you make it, তবে Amy Cuddy একধাপ আগে বেড়ে বলছেন, "Fake it till you become it". অর্থাৎ, এরকম acting করতে করতে শুধু একটা ইন্টারভিউ, বা একটা পরীক্ষা পার হয়ে যাওয়াই না, বরং নিজেকে আসলেই বদলে ফেলো, সত্যিকার অর্থেই সেরকম successful হয়ে যায় যাও যেমন তুমি pretend করছো। এবং সেটা আসলেই সম্ভব। এই গবেষক স্বয়ং তার প্রমাণ। 

---------------------------------------------------------------

এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি জানি অনেক আগে থেকেই। Amy Cuddy এর সেই বিখ্যাত TED Talk শুনেছি অনেক অনেক বার। তবে সম্প্রতি এই বিষয়টার সম্পূর্ণ নতুন একটা সাইড সামনে আসলো। এতদিন ব্যাপারটা কে শুধু worldly matters-এই applicable মনে করেছি। কখনও মাথাতেই আসেনি যে,, এটা তো দীনি ব্যাপারেও প্রয়োগ করা সম্ভব। 

আমরা তো আল্লাহওয়ালা হতে চাই তাই না? তাহলে আল্লাহওয়ালাদের মতোই আচার আচরণ করি না কেন? মন থেকে আসছে না, তবুও তাদের মতো ভান করি। অন্যকে ধোকা দেয়ার জন্য না, নিজের psyche কে rewire করার জন্য। তাদের মতো ধীরে নামাজ পড়ি, দুআ করি, দৃষ্টি নামিয়ে রাখি। হাফিজরা কত তেলাওয়াত করে, হিংসা হয়? তাহলে pretend করি আমিও হাফেজ, তাদের মতোই যখন তখন কুরআন খুলে পড়তে লেগে যাই! 

মজার ব্যাপার হলো, আমাদের বড়দের কথাতেও কিন্তু এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন হাদিসে আছে, তিলাওয়াতের সময় কান্না না এলে কান্নার ভান করো! অর্থাৎ কুরআনের প্রভাবে কান্না আসার কথা, তবে যদি না আসে, তাহলে কান্নার ভান করলেও ওই effect পাওয়া যাবে! 

নামাজের মানসিক অবস্থার কারণে শরীরে স্থিরতা আসার কথা। কিন্তু বলা হয়, যদি অন্তরের একাগ্রতা না আসে, তাহলে নামাজের বাহ্যিক বিষয়গুলোতে মনোযোগ দাও। শান্তভাবে দাড়াও, রুকু সিজদা লম্বা করো, ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করো।  এভাবে দিনের পর দিন চেষ্টা করতে থাকলে, দেখা যাবে এই বাহ্যিক স্থিরতার প্রভাব মনের উপরেও পড়বে, নামাজে খুশু আসবে! অর্থাৎ মনের খুশু যদি না থাকে, আমি এমন ভান করি যে আমার মন খুব স্থির, সেকারণেই খুব স্থিরতার সাথে নামাজ পড়ছি। এভাবে pretend করতে করতে আসলেই এক সময় মনে স্থিরতা চলে আসবে, সত্যিকার খুশু আসবে।

সুবহানআল্লাহ ! "Fake it till you become it" -এর এরচেয়ে ভালো প্রয়োগ আর কি হবে?

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

Sylhet 2009 (Day 3): The Other Side of the Fence

মন্ত্রমুগ্ধ

ড: হাসিবের গল্প