লালাখালে এক একলা পথিক
সিলেটে এই নিয়ে ৪র্থ বার আসা, আর প্রতিটা সফরই রীতিমত unique! প্রথমবার, সেই কত বছর আগে! সেবারই প্রথম ট্যুর এর মজা'র স্বাদ পেয়েছিলাম। মজাটা আরও অনেক বেশি হয়েছিল কারণ ফ্যামিলির আমরা ৫ জন ছাড়াও সেবার সাথে ছিল আমাদের প্রিয় দাদি, আরও ছিল আমার cousin লাকি আপু। সেই ট্রিপের খুব বেশি কিছু মনে না থাকলেও, সেই ট্রেন এর যাত্রাটা খুব মনে পরে। আরেকটা দৃশ্য ভেসে ওঠে ঝাপসাভাবে। পাহাড়ের উপরে, সবুজের মাঝখানে একটা বাংলো, চারপাশের ঘাসে ঢাকা চত্বরটা ফুলের গাছে ঘেরা। কিনারে গিয়ে ফুলের ঝোপ দুই হাতে সরাতেই...।। সুবহানাল্লাহ! নিচে বহদুর পর্যন্ত ঢেউ খেলে নেমে গেছে চা-পাতায় ঢাকা এক সাগর! এরকম দৃশ্য সেই প্রথম। ঘুরে বেরানোর প্রতি আমার constant আকর্ষণটা মনে হয় তখন থেকেই শুরু।
এরপরের সিলেট যাওয়া অনেক বছর পর, ভার্সিটি লাইফের শেষদিকে, সাথে দোস্তরা কয়েকজন। ছোটবেলার ট্রিপটা ভাল মনে ছিল না, তাই সিলেটের সৌন্দর্য এই ২য় সফরেই সত্যি সত্যি চেনা হল। সিলেট শহরে না থেকে আমরা ছিলাম একেবারে শ্রীমঙ্গলে। সেখান থেকে লাউয়াছড়া ঘুরে দেখলাম ভাল করে। তারপর জাফলং, মাধবকুণ্ড। মন্ত্র-মুগ্ধ করা সেই দিনগুলোর কথা আগে লিখেছিলামও 'মনের মাধুরী মিশিয়ে', তাই এখন আর লিখলাম না।
আর ৩য় সফর? মাফ করবেন, এটার কথা এড়িয়ে যেতে চাই, অন্তত এই লেখায়। মজার না হলেও, অত্যন্ত
'শিক্ষণীয়'
ছিল মাত্র এক বছর আগের সেই ২ দিন। সেই শিক্ষার কথা না হয় আরেকদিন হবে।
যা হোক , এবারের ট্রিপের কথায় আসি। যেহেতু অফিসের কাজে গেছি, তাই এবার first priority অবশ্যই কাজ। কাজের ফাকে ছুটি ছিল একদিন, তাই 'কাজে' লাগালে ওইদিনটাকেই লাগাতে হবে। কই যাওয়া যায়? ২টা টার্গেট মাথায় ঘুরছিল, রাতারগুল আর লালাখাল। হোটেলের ভাইদের ইনফো হল, রাতারগুল যাওয়ার সময় এখন না, বৃষ্টি শুরু হবার পরে। লালাখালের নীলচে-সবুজ
(নাকি সবুজাভ নীল) পানির ছবি অনেকবার দেখেছি, ইচ্ছা ছিল অনেকদিনের কাছে থেকে দেখার। ডিসিশন নেয়াটা সহজই ছিল।
সহজ ছিল না একটা বিষয়, ঘুরতে যে টাকা লাগে! সাধারণত টুরিস্টরা লালাখাল বা ওই দূরত্বের কোন জায়গায় যায় সিএনজি বা মাইক্রো বাস রিসার্ভ করে। কয়েকজনের গ্রুপের জন্য সেটা অনেক সহজ, কারণ বড় অংকের ভাড়াটা শেয়ার করা যায়। কিন্তু আমি যে এক Lone
Traveler! কয়েক জায়গায় খবর নিয়ে সিএনজি ভাড়া যা শুনলাম, তাতে লালাখাল না দেখে হোটেল থেকে একটু সামনে কীন ব্রিজের উপর থেকে সুরমা নদী দেখেই ফিরতে হবে মনে হল। নিরাশ হয়ে শেষমেশ ঘুম দেয়ার ডিসিশন নিলাম বৃহস্পতিবার রাতে, পরেরদিনের প্ল্যানও মোটামুটি তাই।
অনেকেই বলে ঘুমাতে গিয়ে মোবাইল টেপা খুব খারাপ। আমিও জানি, এটা ঘুমের জন্য বেশ ক্ষতিকর। তবে কিছু ফায়দা হয় মাঝে মাঝে। সেই রাতে হল। নেট এ আমার মত আরেক ভুখা নাঙ্গা ট্র্যাভেলর দেখি লালাখাল ঘুরে আসার কাহিনী লিখেছে! আরে আসলেইতো! টুরিস্টের মত ট্র্যাভেল করতে হবে কেন! লোকাল পাবলিক কি কেউ ওইদিকে যায়না? ওরা কিভাবে যায়? এবার মনে হল, হবে,
কালকে কিছু একটা হবে ইনশাআল্লাহ।
সকালে উঠে আলাপ করলাম হোটেলের এক স্টাফের সাথে। সুন্দর ট্র্যাভেল প্ল্যান বের হয়ে আসল। গপাগপ কিছু নাস্তা খেয়ে পেটটাকে শান্ত করে বের হয়ে পড়লাম। রিকশা নিয়ে বন্দর বাজার গিয়ে খুব সহজেই পেয়ে গেলাম একশ ভাগ লোকালদের ট্রান্সপোর্ট,
লেগুনা। শহরের বাইরে কোথাও যেতে হলে সাধারণ লোকজন যায় হয় লেগুনায় নাহয় বাসে। লেগুনার পিছনে গাদাগাদি করে ৮-১০ জন হতেই শুরু হল চলা, সিলেট টু সারিঘাট।
প্রায় ১ ঘণ্টার এই লেগুনা যাত্রাটাই আলাদা একটা
attraction বলা যায়। আমি ছাড়া ওই লেগুনায় আর কেউ টুরিস্ট নেই, সব স্থানীয় লোকজন। একটু পর পর কত নতুন নতুন এলাকায় থেমে থেমে লোক উঠাচ্ছে নামাচ্ছে। কখনো উঠছে আমার মত 'জোয়ান'
ছেলে,
কখনো বাচ্চা কোলে মা, কথনো হাসিমুখের, সাদা দাড়ির কোন দাদা! সবাই কথা বলছে আঞ্চলিক ভাষায়, প্রায় কিছুই বোঝার উপায় নেই! তবে শুধু 'নির্বাচন'
আর
'সংসদ'
শব্দ ২টা বুঝতে পারলাম, তার মানে আমাদের ফেভারিট টপিক পলিটিক্স নিয়ে কথা হচ্ছে! আর আরেক লোক তার মাকে (অথবা শাশুড়িও হতে পারে) তুলে দেয়ার সময় একটা কথা বলল যেটা বুঝতে পেরেছিলাম,
"তোমাদের মোবাইল দেয়া না দেয়াই সমান"। মায়েদের নিয়ে ছেলেদের এটা তার মানে ইউনিভার্সাল সমস্যা!
লেগুনাটা শহরের বাইরে বের হতেই শুরু হল রাস্তার দুই পাশে সবুজ আর সবুজ। জাফলং রুটের এই সৌন্দর্য আগেও দেখেছি, এবার যেন আরও ভালভাবে দেখলাম। দামি কোন এসি-ওয়ালা মাইক্রবাসের জানালার ভেতরে বসে গেলে হয়ত অনেক comfortable হত, তবে এতটা immersive একটা অভিজ্ঞতা কখনই হত না। সিরিয়াসলি, এটা আমি 'আঙ্গুর ফল টক' মনোভাব থেকে বলছিনা!
সারিঘাট নেমে রাস্তাটা পার হতেই প্রথম চোখে পড়ল, অদ্ভুত রঙের পানি! সমুদ্রের নীলও ঠিক না, নদীর পানির সবুজও না! রঙটা আসলে Cyan এর কাছাকাছি মনে হল। নদীর পাড়ে, উঁচু জায়গা থেকে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ শুধু দেখলাম! মাথার উপরে বিস্তীর্ণ খোলা আকাশ, মেঘ নাই এক টুকরোও, সূর্যের আলোয় জ্বলছে সবকিছু; পায়ের নিচে বালু; আর একটু সামনে, কিছু নিচে, একেবেকে চলে যাচ্ছে সারি নদী, যার রঙের বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা আর নাই করলাম। দাড়িয়েই থাকলাম বেশ কিছুক্ষণ। একটু নিচেই নামলেই তো পানি, নৌকা, তাও নামতে ইছা করছে না। কারণ পানির কাছে গেলে, নৌকায় চড়ে বসলে তো আরেক দৃশ্য, আরেক মজা, আর এখান থেকে আরেক! এই phase-টা থাকনা আর কিছুক্ষণ!
ইচ্ছা ছিল নৌকা নেব এখান থেকেই, নৌকায় যাব লালাখাল। প্রায় এক ঘণ্টা লাগবে যেতে, নৌকা ভ্রমণটা এনজয় করব। কিন্তু ওই যে, আমি তো lone
traveler , এখানেও সেটা প্রব্লেম হয়ে দাঁড়াল। এখান থেকে 'রিসার্ভ' ছাড়া নৌকা নেয়া যায় না। মানে নিতে হলে পুরা নৌকা নিতে হবে। অর্থাৎ ১০-১২ জন এর একটা ফ্যামিলির জন্য যা খরচ, আমার একারও তাই! অঢেল সম্পত্তির মালিক, বড়লোক বাপের বখে যাওয়া, অথবা ভাবুক, খেয়ালি, হুমায়ুন আহমেদের নাটকের কোন চরিত্র হলে হয়ত একাই নিতাম, তবে আমি এগুলোর কোনটাই না। টাকা পয়সা রীতিমত সীমিত, একটু আগে মাত্র লেগুনা থেকে নামলাম, দেখলেন না! তো কি আর করা, নৌকায় কিছুক্ষণ বসে থেকে ছবি তুললাম (সেলফি না অবশ্যই), তারপর আবার হাটা দিলাম। সারি নদীর 'ওপার'
গিয়ে
'টমটম'
নিতে হবে।
নৌকার ভেতরে নৌকা, তার ভেতরে নৌকা, তার ভেতরে...... |
এখনও অনেক সীট খালি...... |
নৌকার মজা পাইনি, তবে তার বদলে পেলাম আরেক সুন্দর দৃশ্য। সারি নদীর উপর দিয়ে পুরনো এক লোহার ব্রিজের উপর দিয়ে হেটে পার হবার সময়, আরও সুন্দর করে দেখলাম নদী, আর তার দুই পাড়ের সীনারি। ব্রিজের উপরও কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকার ইচ্ছা ছিল, তবে বড় গাড়িগুলো যাওয়ার সময় পায়ের নিচের গোটা ব্রিজটাই যেভাবে কাঁপছিল তাতে বেশিক্ষণ থাকতে সাহস হলনা।
ব্রিজ পার হয়েই টমটম পেয়ে গেলাম একটা, এখানেও আমার সহযাত্রীরা সবাই লোকাল। তবে এই পথটা যেন একেবারেই খাঁটি গ্রামবাংলার রাস্তা; সিলেটের চা বাগান, উঁচু নিচু টিলার কোন চিহ্ন নেই। কোথাও পাকা, কোথাও কাচা রাস্তা, আর দুই পাশে ফসলের খেত, মাছের ঘের, কচুরি-ঢাকা পুকুর। অল্প কিছু সময় পরেই আমরা এসে থামলাম লালাখাল এর পাড়ে, আরও accurately বলতে গেলে,
নাজিমগর রিসোর্টের রিভার কুইন রেস্টুরেন্ট এর সামনে।
ব্রিজের উপর থেকে |
রেস্টুরেন্টের বারান্দা থেকে লালাখাল দেখে আবার মুগ্ধ হলাম। তবে বেশিক্ষণ দাড়াতে পারলাম না। আমি যেই সময়ে সিলেটে, তখন সারা দেশে ৩ দিন টানা ছুটি, আর ঢাকার মানুষ এই ৩ দিন 'বাঁচার আশায়' সব ঢাকার বাইরে। সিলেট তাই এখন ট্যুরিস্ট দিয়ে রীতিমত গিজগিজ করছে, আর তাই নাজিমগরের এই রেস্টুরেন্টে প্রায় দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। সময় নষ্ট না করে ভাবলাম নৌকা নেয়ার চেষ্টা করি। নাজিমগরের নিজস্ব কিছু সুন্দর বোট আছে ঘাটে, সুন্দর সাদা রঙ, ছাউনি দেয়া। দেখলাম বেশ কয়েকটা ভেড়ানো আছে। সকাল সকাল এসেছি, তাই ট্যুরিস্টের দল এখন রেস্টুরেন্টে নাস্তা খেতে ব্যস্ত। তাই নৌকাগুলোকে available মনে হল। নিচে নেমে খোজ নিতে গিয়ে আবার সেই বিপত্তি। "আপনারা কয়জন?" আরে ভাই আমি তো একা! জানা গেল, একা হই আর যতজনই হই, এখানেও পুরো বোট 'রিসার্ভ'
নিতে হবে। এক ঘণ্টা ১০০০ টাকা, আধা ঘণ্টা ৫০০। মেজাজ গরম হল আরেকবার। আবারও 'লোকাল' ধান্দা করতে লাগলাম। কিছুদুর সামনেই এলাকার মাঝি ভাইদেরও নৌকা পাওয়া যায়। চলে গেলাম সেদিকে। তবে
'একাকীত্বের অভিশাপ' পিছু ছাড়ল না! এরাও এক্কা-দোক্কা বুঝে না। আরও
annoying ব্যাপার হল, এরা যদি টের পায় যে কয়েকটা আলাদা গ্রুপ খরচ বাচাতে একসাথে শেয়ার করে নৌকা নিতে চাচ্ছে, তাদেরকেও এরা নিবে না! 'এক ফ্যামিলি, এক নৌকা' নীতিতে এরা অটল।
পাড়ে দাড়িয়ে দেখতে লাগলাম, পানিতে নাহয় নাই ভাসলাম। শুক্রবার ছিল, তাই জুমা'র নামায কোথায় পড়ব সেই চিন্তাও ছিল। জানলাম, এই পাড়েও মাসজিদ আছে, ওই পাড়েও। আছা ওই পাড়ে আর কি আছে? আছে লালাখাল চা বাগান। এই চা বাগানে ঘোরাও লালাখাল ভ্রমণের একটা আকর্ষণ। ১ ঘণ্টার যে নৌকার প্যাকেজ, সেখানে এই চা বাগান ঘুরে দেখার টাইমও ইনক্লুডেড। আর ওই চা বাগানের ভেতরেও আছে একটা মাসজিদ! তাহলে তো কোনভাবে নদীটা পার হলেই হয়! দেখলাম স্থানীয় লোকজন পারাপার করছে সাধারণ নৌকায়। আর দেরি কেন! আবারও পুরো লোকাল স্টাইলে উঠে পড়লাম, আর রঙ্গিন পানির সরু নদীর উপর দিয়ে চলে গেলাম ওপাড়ে। জুমা'র নামায তখনও ১ ঘণ্টারও বেশি বাকি। চা বাগান এই ফাঁকেই ঘুরে নিব।
চা বাগানের হেটে যাওয়ার রাস্তাটা একেবারে যেন গ্রামের মধ্য দিয়ে। কয়েকটি পুল পার হয়ে যেতে হয়। সেরকমই একটার উপর দিয়ে যাচ্ছি, আর আমার পাশের ২ সবুজ টিলার মাঝখানে একটু ফাকা হল, আর আবার উকি দিল লালাখালের পানি। দুইপাশে আর নিচে সবুজ, মাঝখানে জ্বলজ্বলে নীল পানি! কিছুক্ষণ আবারও আমাকে দাড় করিয়ে রাখল ওই লালাখাল।
একটু পরেই শুরু হল চা গাছের রাজত্ব। তবে এর আগের সফরগুলোতে চা বাগানে যেমন চোখ ধাঁধানো সবুজের কারপেটিং দেখেছি, এখানে তেমনটা না। কারণ একটা হল বৃষ্টি এখনও শুরু হয়নি, আর আরেকটা কারণ একটু পরে জানতে পারলাম বাগানের এক কর্মী 'দাদা'র কাছ থেকে। পুরনো গাছ তুলে লাগানো হয়েছে নতুন চারা, সেগুলোই বড় হয়ে বর্তমান অবস্থায় আছে। তারপরও,
চারপাশে সবুজ দেখতে থাকলাম চোখ ভরে, কবে আবার দেখব কে জানে! হেঁটে হেঁটে উঠতে থাকলাম টিলা বেয়ে, যত উপরে যাই, ততোই নিচের সীনারি বেশি থেকে বেশি সুন্দর লাগে! একেবারে উপরে বাগানের কর্মীদের ঘরবাড়ি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম, এরা চা বাগানেই কাজ করে, চা বাগানেই জন্ম, এখানেই শেষ। আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম, এদের অবস্থারও কোন পরিবর্তন নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাদের প্রতি আমার সব দায়িত্ব সেরে ফেললাম। সাথে আছে টিপিকাল নিজেকে ধোঁকা দেয়া স্বান্তনা,
'আমি আর কিই বা করতে পারি'।
সবুজের ফাঁকে......... |
টি-এস্টেটের ছোট্ট গ্রামীণ মাসজিদে নামায পড়ে শান্তি লাগল। এসির বাতাস নেই, উপরে ঝাড়বাতি নেই, ফ্লোরে টাইলস নেই, ৪-৫ কাতার মানুষের মাথার উপর টিনের ছাদ। কিন্তু অন্যরকম একটা প্রশান্তি ছিল সেখানে, যেটা ঢাকার ব্যস্ত মানুষে ঠাসা 'ফাইভ স্টার' মাসজিদগুলোতে পাওয়া কঠিন। আরও কিছু ওয়াক্ত এরকম একটা মাসজিদে নামায আদায় করতে পারলে মনে হয় কিছু 'ইসলাহ'
হত।
নৌকাটাও মনে হয় গাছের ছায়া খুঁজছিল |
দুপুরের রোদটা ছিল একটু বেশি তীব্র, তাই বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম রিভারভিউ এর বারান্দায়। তাপমাত্রা 'ফুটন্ত' থেকে 'কুসুম গরম' এ নেমে আসার পরে আবার এসে দাঁড়ালাম পানির কিনারায়। চা বাগান তো ঘোরা হল, কিন্তু লালাখালের পানিতে নৌকা ভ্রমণের শখতো এখন মিটল না। এছাড়া ১০-১৫ মিনিট নৌকা-রাইড দূরেই নাকি 'জিরো পয়েন্ট', অর্থাৎ বাংলাদেশের সীমানা। সেটার ব্যবস্থা করতে দেরি হল না। স্থানীয় এক মাঝির ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে নিলাম অল্প কিছু টাকায়, সে আমাকে নিয়ে যাবে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত, আর কিছুক্ষণ ঘুরাবে পানিতে। শ্যালো ইঞ্জিন এর ভটভট শুনতে শুনতেই চলতে লাগলাম। এই সস্তা ব্যবস্থায় মাথার উপর ছাউনি ছিলনা, তাই নিজেই এক হাতে একটা ছাতা ধরে রাখলাম। আশেপাশের নৌকা থেকে টুরিস্ট গ্রুপগুলো কেমন যেন অবাক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবিওয়ালা এক মোল্লা, যার এক হাতে ছাতা (expected), আরেক হাতে
DSLR ক্যামেরাটা চোখের উপর ঠেসে ধরা
(unexpected), একা এক নৌকা নিয়ে বিকট শব্দ করতে করতে যাচ্ছে; এমন কম্বিনেশন তো খুব কমন হবার কথা না।
নীল পানি এর আগেও দেখেছি, ২ বার। মালয়শিয়ার তিওমান আইল্যান্ড আর কেপাস আইল্যান্ডে। তবে ওই সাগরের নীল আর এই নীল এক না। ওখানের পানি ছিল কাঁচের মত স্বচ্ছ, তিওমানে তো পানিতে সাতার কেটেছি, প্রায় পুরটা সময় পানির নিচে তাকিয়েই; অসংখ্য রঙ-বেরঙ্গের মাছ আর নানা আকৃতির অদ্ভুত সব কোরাল দেখতে দেখতে। কিন্তু লালাখালের নীল পানি স্বচ্ছ না মোটেই, বরং স্বাভাবিক নদীর পানির মতই ঘোলাটে। সাগরের আর নদীর পানির বৈশিষ্ট্যের এই কম্বিনেশনের কারণেই হয়ত লালাখালের পানি অনেক অবাক করে, তাকিয়ে থাকতে হয়। আমিও তাকিয়েই ছিলাম। কখনো চশমার লেন্স, কখনো ক্যামেরার লেন্সের ভেতর দিয়ে। মন চাইছিল নৌকাটা চলতেই থাকুক, কিন্তু আধা ঘণ্টার কাছাকাছি হতেই আমার মাঝি ভাই উসখুস করতে শুরু করল কেন জানি। টাকা কিছুটা বেশি ঠিক করলে হয়ত আরেকটু পরে উসখুস করত। যাইহোক, অনিচ্ছা সত্ত্বেও নৌকা যাত্রা শেষ করতে হল।
নীল পানি এর আগেও দেখেছি, ২ বার। মালয়শিয়ার তিওমান আইল্যান্ড আর কেপাস আইল্যান্ডে। তবে ওই সাগরের নীল আর এই নীল এক না। ওখানের পানি ছিল কাঁচের মত স্বচ্ছ, তিওমানে তো পানিতে সাতার কেটেছি, প্রায় পুরটা সময় পানির নিচে তাকিয়েই; অসংখ্য রঙ-বেরঙ্গের মাছ আর নানা আকৃতির অদ্ভুত সব কোরাল দেখতে দেখতে। কিন্তু লালাখালের নীল পানি স্বচ্ছ না মোটেই, বরং স্বাভাবিক নদীর পানির মতই ঘোলাটে। সাগরের আর নদীর পানির বৈশিষ্ট্যের এই কম্বিনেশনের কারণেই হয়ত লালাখালের পানি অনেক অবাক করে, তাকিয়ে থাকতে হয়। আমিও তাকিয়েই ছিলাম। কখনো চশমার লেন্স, কখনো ক্যামেরার লেন্সের ভেতর দিয়ে। মন চাইছিল নৌকাটা চলতেই থাকুক, কিন্তু আধা ঘণ্টার কাছাকাছি হতেই আমার মাঝি ভাই উসখুস করতে শুরু করল কেন জানি। টাকা কিছুটা বেশি ঠিক করলে হয়ত আরেকটু পরে উসখুস করত। যাইহোক, অনিচ্ছা সত্ত্বেও নৌকা যাত্রা শেষ করতে হল।
তারপর? Unfortunately তার আর পর নেই। Lone Traveler হওয়ার কারণে প্ল্যান ছিল সন্ধ্যার আগেই শহরে ফিরব, তাই আর দেরি না করে ফিরে যাওয়ার রাস্তা ধরলাম। গাছের সবুজ, পাহাড়ের বেষ্টনী, আকাশের বিশালতা, সূর্যের প্রতাপ, আর,
সবকিছু ছাপিয়ে, লালাখালের মায়াবী নীল ফেলে রেখে, শহরের ব্যাস্ততার দিকে ফিরে যেতে কে চাইতে পারে? আর সেই ফিরে যাওয়ার বর্ণনাই-বা লিখতে কে চায়, পড়তে কে চায়? তাই এই পর্বটা স্কিপ করলাম।
এরকম একটা সফর সত্যিই আল্লাহ'র একটা নিয়ামত। কতকিছু দেখার, শোনার,
শেখার,
অনুভব করার ছিল মাত্র ওই কয়েক ঘণ্টায়! তবে মনে হচ্ছিল, এরকম একটা লোকেশনে ট্রিপ একা না হয়ে 'অনেকা',
অথবা অন্তত 'দোকা' হলে বেশ ভালই হত। [আরে! আপনি কেন মনে করছেন আমি আমার অচেনা-অদেখা বেটার হাফ-এর কথাই চিন্তা করছি? একটা ফ্রেন্ড-এর কথাও তো ভাবতে পারি, তাই না? আশ্চর্য! *লেখক রাগে গজগজ করতে করতে প্রস্থান করবে*]
Comments
Post a Comment