বডি-বিল্ডার মুসল্লি

উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরের মসজিদে নামাজ পড়া হয় প্রায়ই। বিশেষ করে ছুটির দিনে জোহরের নামাজটা। সেদিন নামাজের কাতারে দাঁড়িয়ে দেখলাম সামনের কাতারে এক বডি-বিল্ডার! সাধারণত যারা ব্যায়াম-ট্যায়াম করে তারা একটু টাইট ফিটিং জামা কাপড় পরতে পছন্দ করে। এতে যে এতো কষ্ট করে দিনের পর দিন ঘাম ঝরিয়ে ফুলিয়ে তোলা পেশিগুলো ভালো করে ডিসপ্লে করা যায়! নাকি তাদের পেশীবহুল শরীর 'ধারণ' করার মতো জামাকাপড় বাজারে পাওয়া যায় না? কে জানে। সামনের এই মুসল্লি ভাইয়ের পোশাকও সেরকম। তার আঁটোসাঁটো টিশার্টটা অনেক কষ্টে তার ফেঁপে ওঠা মাসলগুলোকে ঢেকে রেখেছে। যেন একটু টান দিলেই ফরফর করে ছিড়ে যাবে। (হাল্ক হোগানের কথা মনে আছে?) আমার ভয় হচ্ছিলো, না জানি রুকু সিজদায় গিয়ে পেশির চাপে জামা ছিড়ে যায়!

নামাজ শেষ হলো। না, সেরকম কোনো দুর্ঘটনা ঘটলো না। ছুটির দিন হলে নামাজ শেষ করে মসজিদে বসে থাকা আমার খুব প্রিয় একটা কাজ। সেদিনও কিছুক্ষন বসে থাকবো বলে ভাবলাম। সুন্নত আদায় করে বেশিরভাগ লোকই চলে গেছে। কিন্তু একটু সামনের দিকে দেখলাম, বডি-বিল্ডার ভাই যায়নি। লক্ষ্য করলাম, নামাজ শেষে বসে বসে কিছু একটা মনে মনে পড়ছে সে। একটু পরে দেখলাম, দুহাতে ফু দিয়ে তার পেশীবহুল শরীরে হাত বুলিয়ে নিলো! একবার, দুবার, তিনবার! তার মানে, 'তিন কুল' পরে শরীরে 'দম' করছে!
মানুষের যখন 'শক্তি' বেড়ে যায়, হোক সেটা শারীরিক, আর্থিক বা রাজনৈতিক, তার ভেতরে অটোম্যাটিক একটা 'আমি কি হনু রে' ভাব চলে আসে। তাদের চলাফেরা, চালচলন, কথাবার্তা, সব কিছুতেই একটা দাম্ভিকতা প্রকাশ পায়। কারো সামনে বিনয়ের সাথে আচরণ করা যেন অপমানজনক। কোনো কোনো অভাগা এই মনোভাব তার রবের সাথেও প্রকাশ করে বসে! মসজিদে যাওয়া তাদের কপালে জোটে না। জিকির, তিলাওয়াত? সে তো দূর কি বাত।

তবে আমাদের এই মুসল্লি ভাইয়ের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে নি। এতো স্ট্রং, মাসকুলার একটা শরীর নিয়েও, নিজের নিরাপত্তার জন্য সে নিজের শক্তির উপর ভরসা করে নি। সে জানে, সকল শক্তির উৎস একমাত্র আমার রব, আল্লাহ। তাই তো নামাজের সময় হলে নিজের এই বিশাল বপু আল্লাহর সামনে রুকু-সিজদায় ঝুকিয়ে দিয়েছে। তাই তো নিজের পেশী শক্তির উপর ভরসা না করে, আল্লাহর নবীর শিখিয়ে দেয়া আমল করে, আল্লাহর কালাম পড়ে নিজের গায়ে হাত বুলিয়ে নিচ্ছে।

আল্লাহর রহমত, আল্লাহর ক্ষমা, আল্লাহর সন্তুষ্টি নাকি বাহানা তালাশ করে? এই বান্দার আমল দেখে কি রব্বুল আলামিন খুশি হবেন না? তাঁর ক্ষমা, তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য এই ভাই কি একটা 'বাহানা' তৈরী করে ফেলেনি?

আচ্ছা, আমার কাছে এমন কি কি বাহানা আছে আমার আল্লাহকে খুশি করার জন্য?

Comments

Popular posts from this blog

Sylhet 2009 (Day 3): The Other Side of the Fence

মন্ত্রমুগ্ধ

ড: হাসিবের গল্প